১।
অনেক বছর আগের কথা - একটা ছেলে আমাকে মেসেজ পাঠালো - এই যে ভাই, মেয়েদের হিজাব পড়তে দিচ্ছে না - আমাদের কি কিছুই করার নেই। ছেলেটাকে অনেক বোঝালাম। আস্তে আস্তে ইসলাম বোঝা শুরু করছে, মানার চেষ্টা করছে - ঈমানের তাগিদ অনেক বেশি।
একটা সময় ঈমান ডাল-ভাত হয়ে যায়। আগের পাপগুলো ফিরে আসে। আগের বদভ্যাসগুলোও। আগে ছিল গার্লফ্রেন্ড, এখন হয় দ্বীনি বোন।
সে সমস্ত দ্বীনি বোনেরা কেউ অবিবাহিত, কেউ বিবাহিত।
হ্যাঁ, বিবাহিত!
সম্পর্ক বাড়তে থাকে, সম্পর্ক ভেতরে ঢুকতে থাকে।
শয়তানময় দুনিয়া, আল্লাহর কথা আর মাথায় থাকে না।
আল্লাহর কথা মাথায় না থাকলেও ফেসবুকের স্ট্যাটাসে কিন্তু থাকে।
কারণ দ্বীনি বোনেরা মেসেনজারে নক দেয়, ভাইয়া, আপনি খুব ভালো লিখেন।
কপি-পেস্ট হতে থাকে। ফেসবুক সেলেব্রিটি বলে মানুষ ডাকা শুরু করে।
একদিকে শয়তান হারামে ঢুকিয়ে নিয়ে গেছে, অন্যদিকে খ্যাতি আসমানে তুলে ফেলেছে।
এই চিঠিটা সেই ছেলেটার লেখা - ওর হাতের লেখা আমি চিনি।
ছেলেটার নামে অনেক নালিশ এসেছে অনেক মেয়ের কাছ থেকে।
ছেলেটাকে ডেকে বলেছিলাম - তাওবাহ করো। আল্লাহ এই গুণাহ গোপন করুক - ভালো হয়ে যাও।
ভালো হওয়ার লক্ষণ থাকে - ছেলেটার মধ্যে সে সমস্ত লক্ষণ দেখিনি। আরো উল্টো পথে হেঁটেছে।
২। খালি ছেলেরাই খারাপ? এক মেয়ে বিয়ের আগে প্রেম করত, পরে কাজির কাছে গিয়ে বিয়ে করে নিল - হারাম রিলেশনে থাকবে না বলে। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আরো অনেক পরে। সেও আস্তে আস্তে ইসলামের দিকে আসল। কিছু ইসলাম ক্লাসে যাওয়া আসা শুরু করল। কিন্তু ওই যে - হিদায়াত একমাত্র আল্লাহর হাতে, আর কারো কাছে না। যে নিরাপদ ভাবল সে ধ্বংস। মেয়েটার স্বামী সন্তান আছে, কিন্তু তার শান্তি নাই। সে কী যেন খুঁজে বেড়ায়। স্বামী রেখে অন্য পুরুষদের সাথে গল্প করে সে - কফি শপে, হাতির ঝিলে, রেস্তোরায়। গল্প-উপন্যাস লেখালেখি-ছবি আঁকাআঁকি। কত প্রতিভা! কত ছেলে মুগ্ধ হয়ে দেখে - দ্বীনি সিসটার - কত বহুমুখী প্রতিভা! মহিলা মজা পায় - কত ছেলে তাকে মেসেজ পাঠায়। 'ইসলামিক ফ্যামিনিস্ট' - সিসটারদের ক্লোজড গ্রুপ আছে। সেখানে সেসব দেওয়ানা-আশিক ছেলেদের মেসেজ আর চিঠি চাউর হয়। Boys… বঙ্গীয় ইসলামি ফেমিনিস্তরা দেখে, জানে, নীরবে সমর্থন দিয়ে যায়। আর্টের মতো ছেলেদের পোর্টফলিও আছে মহিলার - অনেকগুলো ছেলের প্রফাইল সেখানে। বিভিন্ন পুরুষদের কাছ থেকে চিঠি পান, গোলাপ পান - সেগুলো ডায়েরির মধ্যে জমান। এই মহিলা একটা মিথ্যার জগতে বাস করে। সে সবাইকে ক্রমাগত মিথ্যা বলতে থাকে - এত কঠিন মিথ্যা যে মানুষ অবিশ্বাস করতেও ভয় পায়। তার মিথ্যার চোটে স্বামী হয়ে যায় ভিলেইন - সে নিরীহ ভিকটিম। স্বামী বেচারা স্ত্রীর প্রেমপত্র আর ডায়েরির গাট্টি নিয়ে বসে থাকে - এ কষ্টের কথা সে কাকে বলবে? স্ত্রী তো আর ঘরে ফেরে না।
৩। ফেসবুকের দুনিয়াটা নীল। এখানে খারাপ মানুষ অবলীলায় ভালো সাজতে পারে - ভালো কথা বলতে বা লিখতে পারে। যখন আপনি সেই কথাগুলো পড়েন সেই মানুষটার একটা ব্র্যান্ড ইমেইজ বানিয়ে নেন আপনার মাথায়। আসলে সেই লোকটা বা মহিলাটা পাঁড় শয়তান।
এই যে চিঠিটা - এটা একজন বিবাহিত পুরুষ অন্য একজন পুরুষের স্ত্রীর কাছে লিখেছে। যখন লিখেছে তখন তার নিজের ঘরে স্ত্রী ছিল, মেয়ে ছিল। যার কাছে লিখেছে তার ঘরে স্বামী ছিল, সন্তান ছিল। এখন তাদের কারো সংসার নেই। এরা নিজেরাই ডিভোর্স দিয়েছে।
এই চিঠিটা মিষ্টি প্রেমের চিঠি না। এটাতে ছোট ছোট বাচ্চাদের কান্না আছে। সংসার ভাঙার কান্না - বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছে। দাদা-দাদী, নানা-নানীর কান্না আছে।
শুধুমাত্র প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে গিয়ে এসব পরকীয়া করা। অথচ বাইরের ভেকে 'ইসলামিক সেলেব্রিটি।' পরিচয় জানতে চাইবেন অনেকেই - কী লাভ বলেন? রাকি মাইনুদ্দিন বাটপার ছিল - আপনারা জেনে শুনে ধোঁকা খাননি? আরো কত বাটপার আছে চারপাশে, হিসাব আছে?
একজনকে আঙুল না তুলে উসুলে ঠিক থাকেন - মূলনীতি মেনে চলেন। আলিমদের অনুসরণ করেন, তাদের লেখা পড়েন - হয়তো তাদের লেখাতে হুমায়ুনীয় চটক নেই - কিন্তু ইখলাস আছে। আপনারা আলিমদের কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম শেখেন, কোনো ফেসবুক সেলেব্রিটিদের কাছ থেকে না যারা নিজেরা নিয়ম মেনে ইসলাম শেখেনি এবং 'আমল করেও না।
ফেসবুকে কেউ লেখালেখি করলেই তাকে ফেরেশতা বানিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলে সম্পর্ক বাড়াবেন না। কোনোভাবেই ইসলামের কোনো বিধান লঙ্ঘন করবেন না। নারী-পুরুষে কোনো ফ্রি মিক্সিং নেই। মেসেনজার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন - কোনো কিছুতে বিপরীত লিঙ্গের সাথে কোনো আলাপ নেই। কোনো কাজ থাকলে অন্য মানুষের সামনে করতে হবে, আড়ালে কিছুই করা যাবে না। কোনো প্রাইভেসি চলবে না।
৪। ভাইয়েরা, আপারা, মানুষের পদস্খলন দেখে মন খারাপ হবে, কিন্তু সাবধান হতে হবে আরো বেশি। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আল কুরআনে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবারদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে বলেছেন। আমি শরীফ আবু হায়াত যে কোনো সময় পা হড়কে যেতে পারি - আল্লাহর কাছে আমৃত্যু ঈমান চাই - ঈমান নিয়ে মরতে চাই। শয়তানের ফাঁদ থেকে বাঁচতে চাই। আমরা কেউ শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিরাপদ না। আমাদের কারোই জান্নাত নির্ধারণ হয়নি। আমরা নিজেদের নিয়ে খুব সাবধানে থাকি, হিদায়াতকে ফর গ্র্যান্টেড ধরে না নিই।
কুরআনের একটা আয়াত - খুব সিরিয়াসলি পড়ি -
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিয়েন না এবং আপনার থেকে আমাদেরকে করুণা দান করেন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (আলে ইমরান : ৮)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই ফিতনার দুনিয়াতে আমাদের বেঁচে থাকার তাওফিক দিন।
