আপনাকে যদি আমি বলি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে জাদুটোনাকারীদের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়ে ঘুমাবেন, বদনজরের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চেয়ে ঘুমাবেন, তাহলে আপনি হয়তো অবাক হবেন! ভাববেন "দুনিয়ায় এত সমস্যা থাকতে জাদুটোনাকারী আর বদনজরের ভয়ে এত অস্থির হবার কি আছে! মানুষের কি আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে সারাদিন আমার পিছনে জাদুটোনা করবে আর বদনজর দিবে!"
ঠিক সম্পূর্ণ ঠিক।
কিন্তু আপনি কি জানেন রাসূল(স) নিজে এই নির্দেশটা দিয়ে গেছেন। শুধু একবার না, প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৩ বার করে পানাহ চাইতে বলেছেন। এমনকি প্রত্যেক স্বলাতের পরে এগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
রাসূল(স) ঐ সময়গুলোতে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব এবং নাস ৩বার করে পড়তে বলেছেন। এই হাদীস তো নিশ্চই জানেন! তো সেই ফালাক্ব এবং নাস এর অর্থ কি?
একটু দেখা যাক।
.
.
.
আল ফালাক
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ﴾
১) বলো, আশ্রয় চাচ্ছি আমি প্রভাতের রবের,
﴿مِن شَرِّ مَا خَلَقَ﴾
২) এমন প্রত্যেকটি জিনিসের অনিষ্টকারিতা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন৷
﴿وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ﴾
৩) এবং রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে ,যখন তা ছেয়ে যায়৷
﴿وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ﴾
৪) আর গিরায় ফুঁৎকারদানকারীদের ( বা কারিনীদের ) অনিষ্টকারিতা থেকে৷
﴿وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ﴾
৫) এবং হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন সে হিংসা করে৷
এই যে এখানে ৪ নাম্বার আয়াতে গিরায় ফুৎকারদানকারী দের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া হচ্ছে, এই গিরায় ফুৎকার দানকারী কে?
এরাই হচ্ছে জাদুটোনাকারীরা! তারা যখন কোন মন্ত্র পড়ে তখন গিট্টু জাতীয় কোনকিছুর মধ্যে ফুঁ দিতে হয়। এটাই ব্ল্যাক ম্যাজিকের নিয়ম। এগুলো সাধারণ ম্যাজিক ট্রিক্স না। এগুলো একচুয়েল ম্যাজিক যা জ্বিন জাতির সাহায্যে করা হয়। Satanic worshiper যারা, Illuminati এর অনুসারী, তারা এই ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক করতে পারে।
.
.
.
আমরা অনেকেই ভাবি এসব জাদুটোনা বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জেই বিদ্যমান। তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
আপনি জানেন USA এর মত জায়গা তে প্রচুর ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা হয়। এখানে এই ধরনের ব্যবসায়ীর অভাব নেই। পাশের দেশ মেক্সিকো হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের অভয়ারণ্য! সেখানে বিশাল বড় মার্কেট ই আছে যেখানে শুধু ব্ল্যাক ম্যাজিকের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বিক্রি হয়। ইংল্যান্ডের মত জায়গাতেও এদের ব্যবসা রমরমা!
এক জায়গায় একটা আইল্যান্ড আছে যেখানে শুধু ব্ল্যাক ম্যাজিকের পুতুলগুলোকে পেরেক দিয়ে গেঁথে রাখা হয়। ভুডু ডল সম্পর্কে যারা জানেন, একটা মানুষের নামে একটা পুতুল বানিয়ে, মন্ত্র পড়ে, তারপর সেই পুতুলের বিভিন্ন জায়গায় পিন দিয়ে গেঁথে দিলে ঐ ব্যক্তি শরীরের ঐ জায়গা গুলোতে ব্যাথায় যন্ত্রণায় মরে যাবে। ইংল্যান্ডের রাক্বী আবু দ্বার কে দেখবেন এই ধরনের পুতুল উদ্ধার করে করে ম্যাজিক গুলো নষ্ট করে, পিনগুলো খুলে ফেলে। প্রথমে ৩ কুল পড়ে ফুঁ দিয়ে নেয়, প্রটেকশনের জন্য। কারণ এসব পুতুলের সাথে জ্বিন থাকে! The Ruqya Services পেইজটা ফলো করতে পারেন। তাহলে দেখবেন উনি কিভাবে মানুষকে এসব শয়তানদের অনিষ্ট থেকে উদ্ধার করছেন রুক্বিয়ার মাধ্যমে।
ভুডু ডল সম্পর্কিত ওনার কিছু ভিডিও দেখতে পারেন।
https://www.youtube.com/watch?v=2wXVrZlDhzU
https://www.youtube.com/watch?v=btKNO6kr_rw&t=1s
https://www.youtube.com/watch?v=o7Gl7c6fleE
পৃথিবীর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে এসব শয়তানদের ব্যবসা নেই।
সেজন্য আমাদের রুক্বিয়া-হিজামা করার মত চিকিৎসকও সব জায়গায় প্রয়োজন। যারা অদৃশ্য জগতের এসব শক্তির সাথে যুদ্ধ করছেন, তারা এক ধরনের মুজাহিদ। সুলাইমান (আ) এর জিহাদ কি মনুষ্য জাতির সাথে ছিল?
না। তাঁকে তাঁর কওম মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর জিহাদ ছিল শয়তান জাতির সাথে। আর শয়তানের পূজারী দের সাথে! তাঁর জীবনী থেকে বানানো এই মুভিটি দেখতে পারেন। https://www.youtube.com/watch?v=m5ZMAZR0hmI
শয়তানের সাথে যুদ্ধে নামা, এটা অত্যন্ত কঠিন জিহাদ। যারা রুক্বিয়া করে তারা জানে। জ্বিন জাতি তাদের পিছনে কিভাবে লেগে থাকে। ক্ষতি করার জন্য। অনেককে মেরেও ফেলে।
আমি যেই সময়ে রুকিয়া করতাম, আমারও কিছু এক্সপেরিয়েন্স আছে! সেসব গল্প আরেকদিন হবে।
আমি শুধু বলতে চাই আমাদের জীবনে শয়তানের অনিষ্টের যে প্রভাব তা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টাকে যেন আমরা হালকা করে না দেখি! মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল পাঠালেন, সেই রাসূলের আনুগত্য করতে বার বার নির্দেশ দিলেন, সেই রাসূল আমাদেরকে সারা দিন রাত শয়তানের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দিলেন, সেই শয়তানের ব্যাপারে উদাসীন হবার সুযোগ নেই! কিছুতেই।
শয়তান রা আমাদের সাথেই কোএগ্জিস্ট করে। এটাই বাস্তবতা! সেজন্য রাসূলের শিখানো মাসনুন দুয়া গুলোর গুরুত্ব এত বেশি। ঘরে ঢুকার দুয়া। বের হবার দুয়া। ওয়াশরুমে ঢুকার দুয়া। বের হবার দুয়া। খাবারের শুরুতে দুয়া। শেষে দুয়া। পোশাক চেইঞ্জের সময়ের দুয়া। ঘুমানোর আগের দুয়া। উঠার দুয়া। সকাল-সন্ধ্যার জিকির! এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হতে পারে এসব দুয়া না পড়লে আমাদের গুনাহ হবে না। কারণ ফরজ না। কিন্তু ক্ষতি হবে! .
.
আর ৫ নাম্বার আয়াতে যে হিংসুকের অনিষ্টকারিতার কথা বলা হয়েছে এটার মানে কি? এটাই হচ্ছে বদনজর! Evil Eye! আল আঈন! যেটাই বলেন!
.
.
.
সূরা নাস এ কি বলা হয়েছে দেখা যাক।
আন নাস
ভূমিকা (নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তুর জন্য ক্লিক করুন)
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ﴾
১) বলো , আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের রব ,
﴿مَلِكِ النَّاسِ﴾
২) মানুষের বাদশাহ ,
﴿إِلَٰهِ النَّاسِ﴾
৩) মানুষের প্রকৃত মাবুদের কাছে,
﴿مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ﴾
৪) এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে
﴿الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ﴾
৫) যে বারবার ফিরে আসে, যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে ,
﴿مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ﴾
৬) সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে৷
এখানে খেয়াল করে দেখুন শুধুমাত্র শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই এই সূরাটা নাজিল করেছেন আল্লাহ। আপনি আমি শয়তানকে যতই তুচ্ছ করে দেখি না কেন, আল্লাহ ঠিকই তার অনিষ্ট কে গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন। এবং আমাদেরকে সেই অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় বার বার বলে গেছেন। বার বার সাবধান করেছেন।
আরেকটা বিষয় খেয়াল করুন, শেষের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচণা দানকারী শয়তান শুধু জ্বিনের মধ্য থেকেই না, মানুষের মধ্য থেকেও হয়।
মানুষের মধ্য থেকেও আমাদের কাছে কুপ্ররোচণা আসে। সব মানুষ আমাদেরকে সবসময় সঠিক পথে গাইড করে না। বাবা মা রা ই তো সন্তানকে কত ব্যাপারে অসৎ পথে গাইড করে। আমাদের শিক্ষকরা। ফ্রেন্ডরা। প্রতিবেশী রা। কলিগ রা। সবাই কি সততার মূর্ত প্রতীক নাকি! সবার মধ্যেই কিছু গুনাহ থাকে। আবার সে এগুলো অন্যদের মধ্যে ছড়ানোরও চেষ্টা করে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই লেজকাটা শিয়ালের প্রবণতা কিছুটা হলেও আছে। আমরা নিজে আল্লাহর যে বিধান গুলো মেনে চলতে পারি না আমরা সেগুলোর ব্যাপারে অন্যদেরকেও নিরুৎসাহিত করি।
সেজন্য ইউসুফ আল কারজাভী বলেছেন যে আপনি মদ খেলেও এটা বলতে বলতে খান যে এটা গুনাহ! .
.
.
যাইহোক। আল্লাহ সহায় হোক সবার। ব্ল্যাক ম্যাজিকের ইফেক্টে কিছুটা হলেও আক্রান্ত না, অথবা বদনজরের স্বীকার হচ্ছে না, এমন মানুষ একটাও পাওয়া যাবে না । আর ব্ল্যাক ম্যাজিক এত মহামারীর মত ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবী জুড়ে! সুবহানাল্লাহ! সব জায়গায় এই ব্যবসা চলছে। আধ্যাত্মিক হুজুরের বেশে। অথবা তান্ত্রিকের বেশে। অথবা জ্যোতিষীর বেশে। গণকের বেশে। তাবিজ দানকারী হুজুর। তদবির দানকারী হুজুর। কত নামে যে এরা আছে! সব একই। শয়তানের উপাসনা কারী। জ্বীন দিয়ে কাজ কারবার!
